বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভোটার হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গেছেন। তিনি ঢাকার গুলশান এলাকার ডিএনসিসি ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের একজন ভোটার হবেন। এ জন্য তিনি ইতোমধ্যে অনলাইনের মাধ্যমে নিজের ভোটার ফরম পূরণ করেন এবং তার মেয়ে জাইমা রহমানের পক্ষে কিওয়ার্ড দাখিল করেছেন। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে তিনি ইসিতে পৌঁছান।
জানা গেছে, ভোটার হওয়ার জন্য তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো আইনি বাধা নেই, কারণ তার নাগরিকত্ব ও ভোটার হওয়ার নিয়মাবলি পুরোপুরি মেনে চলেছেন তিনি। ইসি তারেক রহমানকে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, যার মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি ও ছবি প্রদান, আঙুলের ছাপ নেওয়া এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা অন্তর্ভুক্ত।
অতিরিক্তভাবে, জানানো হয়েছে যে, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন যে কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে কখনোই কাউন্সিল বা অন্য কোনো সময়ে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত করার এখতিয়ার রাখে। ফলে, প্রকৃতপক্ষে তারেক রহমানের ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়ায় কোনো আইনি জটিলতা নেই। সাধারণ নাগরিকদের মতো এখানেও সব নিয়ম অনুসরণ হবে—তথ্য যাচাই, ছবি ও আঙুলের ছাপ গ্রহণসহ সব আনুষ্ঠানিকতা যথাযথভাবে সম্পন্ন হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাবি কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শহীদ শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করেন। এ সময় তাকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তিনি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, কবর জিয়ারত করেন, পাশাপাশি মহান মোনাজাত করেন। এ সময় তিনি কবিতা ও গানের কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিতে ফুল দেন।
সুবিধাজনকভাবে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ, ছাত্রলীগ নেতা সাদা দলের আহ্বায়কেরূপে অধ্যাপক ড. মোরশেদ হাসান খান, ছাত্র সংসদের ভিপি সাদিক কায়েম, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছিরুদ্দিন নাছির, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান ও ডাকসুর ছাত্রপরিবহন সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাতের কিছু পেরিয়ে তারেক রহমান নির্বাচন কমিশনে এনআইডি রেজিস্ট্রেশনের জন্য রওনা হন।
বেলা ১০:৪০ মিনিটে তারেক রহমান গুলশানের বাসা থেকে বের হন। তার আগমন দেখতে সকাল থেকেই শাহবাগ মোড় ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নেতাকর্মী উপস্থিত হন।
প্রায় দেড় বছর নির্বাসনের পর, গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার প্রত্যাবর্তনের খবর পেয়ে লাখো নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ ঢাকায় ভিড় জমায়। ঢাকার পূর্বাচলের জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফুট) এলাকায় এক বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে দেশর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
অতঃপর শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন তারেক রহমান। পথে পঁুরে হাজারো নেতাকর্মী তাকে স্বাগত জানায়, উৎসাহে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি যান জিয়া উদ্যান এবং সেখানে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শহীদ জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি ফাতেহা পাঠ করেন, দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন, যাতে শহীদ জিয়ার রুহের মাগফিরাত ও বিএনপি নেত্রীর সুস্থতা কামনা করা হয়।
তিনি এরপর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথে জনতার ঢল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টা থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। রাত ১০টার দিকে তিনি স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
Leave a Reply